বৃষ্টি
-অঞ্জনা গোড়িয়া
বৃষ্টি এখন মানসিক কেন্দ্রে। চঞ্চল মেয়েটা কেমন যেন শান্ত হয়ে যাচ্ছিল। ঠিক শীতল ধীর সরবরের মতো। এখন সে অন্ধকার ঘরে বসে কি সব আঁকি বুকি আঁকে দেওয়ালে। আর তাকিয়ে থাকে বাইরের আকাশের দিকে।
বৃষ্টির মা একবার বাড়িতে রঙীন পাখি পুষে ছিল। সময়ে খেত দিত খাঁচায়। বেশ মজা পেত বৃষ্টি । এক দিন দেখল, কিছু লোক এসে বড় পাখি গুলি বাক্স বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি ছুটে এসে মাকে নিষেধ করল। কিছুতেই শুনল না মা। বুঝিয়ে বলল বৃষ্টিকে, পাখি বিক্রি করেই তো দুটো পয়সা হবে সোনা। সেই জন্যই তো পুষেছি।
বৃষ্টি চুপচাপ শুনল। কি একটা ভেবে চলে গেল। সকালে উঠে মা দেখে অবাক হয়ে গেল। একটা ও পাখি নেই খাঁচায়। বুঝতে আর বাকি রইল না। নিশ্চয় বৃষ্টির কাজ। মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
আমি আর বায়না করব না মা পুতুল কেনার জন্য। পাখি বেঁচে টাকা নিও না। আকাশই ওদের ঘর। কি আনন্দে ওরা উড়ে বেড়ায়,তাই না!
মায়ের রাগ হলেও বৃষ্টির এমন কথার উত্তর দিতে পারল না। সে দিনের পর আর বাড়িতে কিছু পোষে না ।
সেই বৃষ্টিই আজ বন্দী । বন্দী খাঁচা যার পছন্দ ছিল না।
বৃষ্টি নাচে গানে পাড়ার সেরা মেয়ে। মাথা ভরতি কোঁকড়ানো চুল। জ্যাঠিমার কাছে বসে টান টান করে বেনি করত। লাল ফিতে দিয়ে ফুল করে নাচ দেখাত। দিন দিন চঞ্চল ছটপটে মেয়েটা কেমন ভয়ে আতঙ্কে শিউড়ে থাকত।
একদিন ভোরে রেলস্টেশনের দিকে যেতে দেখল তাকে। ওই দিকেই পুলিশ স্টেশন। পাড়ার কিছু লোক এসে খবর দিল। বৃষ্টির বাবা ছুটতে ছুটতে গেল।
দেখে, বৃষ্টি রক্ত মাখা ছুড়ি হাতে বসে আছে। বাবাকে দেখেও মুখে কোন সাড়া নেই। বার বার জানতে চাইল কী করেছ বৃষ্টি? ছুড়িটা দেখিয়ে বলল,খুন করেছি। ওই দুষ্টুলোকটাকে। তাই ধরা দিতে এসেছি।
কে সেই লোক? কী করেছে? সবাই জানতে চায়লো।
বৃষ্টি বলতে শুরু করল,
পাড়ার মুদি দোকানদার, রতন কাকুকে খুন করেছি।প্রায় প্রতিদিনই স্কুলের ছোট মেয়েদের খাবারের লোভ দেখিয়ে ভেতরে নিয়ে যেত। আর ইচ্ছে মতো আদর করতো। খুব কষ্ট হতো।কী সব নোংরামো করে বাড়ি পাঠিয়ে দিত। বাড়িতে বলতে বারন করতো। আমাকে ও প্রায় জোর করে চকলেট খাওয়ানোর লোভে নিয়ে গিয়েছিল। সেদিন টিভিতে এক নাটক দেখেই বুঝেছি । এসব খারাপ মানুষের বাজে কাজ। তাই আজ মেরেই ফেললাম। বড্ড জ্বালা দিত সবাইকে। রাগে মাথা গরম হয়ে গিয়ে ছিল। ছুড়িটা বসিয়ে দিলাম পেটে। ব্যাগে ভরে নিয়ে গিয়েছিলাম স্কুলে। ফেরার পথে বসিয়ে দিয়েছি পেটে।
ওই সব দুষ্টু লোকদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। বলো বাবা, আমি ঠিক করেছি কি না?
বাবার মুখে কোন কথা নেই। মেয়ের সাহসীকথায় গর্বে বুক ভরে গেল।
রতন মারা যায় নি। পুলিশ আহত রতন কে তুলে নিয়ে আসে থানায়।
কিন্তু বৃষ্টি আর ফিরতে পারে নি স্বাভাবিক জীবনে।
খাঁচার ভেতর থেকে সে দেখে, আকাশের বুকে কেমন পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছে। তালি দিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে আর
বলে ওঠে,” যারে পাখি যা উড়ে যা”।